রবিবার ১১ মে ২০২৫ - ০৯:৪৭
মহিলাদের ক্রীড়াচিত্র দেখার শরয়ী হুকুম

সাধারণত, এমন ছবি বা ভিডিও দেখা যেখানে মহিলাদের শরীরের সেইসব অংশ অনাবৃত থাকে—যেগুলো ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী নামাহরামদের জন্য দেখা হারাম—তা গুনাহর পর্যায়ে পড়ে এবং ধর্মীয়ভাবে বর্জনীয়।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: মারজায়ে তাকলিদ হযরত আয়াতুল্লাহ সিস্তানি মহিলাদের ক্রীড়াচিত্র দেখার শরয়ী বিধান সম্পর্কিত একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, জবাবটি আগ্রহী পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি:

প্রশ্ন: মহিলাদের ক্রীড়াচিত্র, যেখানে তাদের দেহের কোনো অংশ উন্মুক্ত থাকে, সরাসরি বা (পরোক্ষভাবে) টেলিভিশনে পুরুষদের জন্য দেখার বিধান কী? এক্ষেত্রে বিবাহিত বা অবিবাহিত হওয়ায় কোনো প্রার্থক্য আছে কি?

উত্তর: যদি কামনার বশবর্তী বা গোনাহে পতনের আশঙ্কা থেকে (ছবি/ভিডও) দেখা হয়, তবে তা হারাম। আর যদি কামনা বিহীন এবং গোনাহে পতনের আশঙ্কাও না থাকে, তাহলেও ইহতিয়াতে ওয়াজিব (ধর্মীয় দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা) অনুযায়ী তা থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। এই বিষয়ে বিবাহিত বা অবিবাহিত হওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা ও শিক্ষা: শিয়া ফিকহে (জাফরি মাজহাব অনুযায়ী), দৃষ্টির পবিত্রতা বা ‘হিফ্‌যে বসর’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক ও শরিয়তভিত্তিক নীতিমালা। এ বিষয়ে আহলুল বাইতের (আ.) শিক্ষাগুলো অত্যন্ত কঠোর এবং সংবেদনশীল। মহিলাদের এমন ছবি বা ভিডিও দেখা, যেখানে শরীরের এমন অংশ অনাবৃত যা সাধারণত নামাহরামদের জন্য দেখা নিষিদ্ধ, তা ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে নিম্নরূপভাবে মূল্যায়ন করা হয়:

১. কামনার দৃষ্টি হারাম: যদি একজন পুরুষ কামনার দৃষ্টিতে (নাজরে শাহওয়াত) মহিলার দিক তাকায় বা ক্রীড়াচিত্র দেখে, তাহলে তা স্পষ্টভাবে হারাম। কারণ এতে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, যা কোরআন ও হাদীস উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নিন্দিত।

২. গোনাহে পতনের আশঙ্কা থাকলে হারাম: এমনকি কামনার দৃষ্টি না থাকলেও যদি এই চিত্রদর্শন গোনাহে পতনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে—যেমন, মনে কুপ্রবণতা জাগানো, খেয়াল বিভ্রান্ত হওয়া ইত্যাদি—তাহলেও তা হারাম।

৩. ইহতিয়াতে ওয়াজিব: যদি এসব পরিস্থিতি না-ও থাকে (অর্থাৎ না কামনা, না গোনাহে পতনের আশঙ্কা), তাহলেও অনেক মহান শিয়া ফকিহ—যেমন, আয়াতুল্লাহ সিস্তানি—এটি থেকে বিরত থাকার জন্য ইহতিয়াতে ওয়াজিব হিসেবে গণ্য করেছেন। অর্থাৎ, কোনো স্পষ্ট হারাম না থাকলেও সুরক্ষার খাতিরে তা না দেখা আবশ্যিক কর্তব্য।

৪. বিবাহিত ও অবিবাহিতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: শিয়া মাজহাবে তাকওয়া ও নফসের সংযম ব্যক্তির বৈবাহিক অবস্থা দ্বারা নির্ধারিত নয়। সুতরাং বিবাহিত হলেও কেউ যদি এ ধরনের ছবি দেখে কামনাবশত বা গোনাহে পতনের আশঙ্কা থাকে, তাহলে তার জন্যও তা হারাম।

শিক্ষণীয় দিক: ইসলাম একটি সমাজকে নৈতিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধতার উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

দৃষ্টিকে সংযত রাখা আত্মশুদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

আহলুল বাইতের (আ.) শিক্ষা অনুসারে, গোনাহে ছোট-বড় নেই; একটি ছোট গোনাহও যদি গাফিলতা সৃষ্টি করে, তাহলে সেটি অন্তরের জন্য বিষের সমান।

সমাজে খারাপ দৃষ্টির প্রভাব শুধু ব্যক্তি নয়, সামগ্রিক পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিতে পারে।

Tags

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha